চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান 

1 day ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত’ সকল পুলিশ সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় চাকরি ফিরে পেতে নানান ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন তারা।

অবস্থান কর্মসূচি পালন করা চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য রাজু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমরা গত ছয় মাস ধরে চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। আমাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করুন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে থেকে যাব না।’’

তারা নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরেন

১. বিগত সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে প্রায় ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের মনে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরই ফলস্বরূপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পুলিশ বাহিনীর কিছু সিনিয়র দানবদের অবৈধ আদেশ পালন করে চাকরি বাঁচাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গণহত্যার মতো অপরাধ করতে বাধ্য হয়।

২. ‘স্বৈরাচারী সরকারের’ আমলে পুলিশ বাহিনীর বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীকে ভয়ঙ্কর দানবে পরিণত করতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে চাকরিচ্যুত করেছে।

৩. বিভাগীয় মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত কোনপ্রকার প্রসিডিউর অনুসরণ করেনি। 

৪. মিথ্যা সাক্ষ্য গ্রহণসহ সকল কিছুতেই তাদের পক্ষের একতরফা নীতি অনুসরণ করেছে। তারা এমনভাবে মামলা সৃজন করেছে যেন, আদালত থেকেও কোনভাবে বিবাদী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারে।

৫. বিজ্ঞ আদালত থেকে রায় পাওয়ার পরও আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি।

৬. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও অন্যান্য অনুমোদনহীন হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিরীহ পুলিশ সদস্যদের চাকরিচ্যুত করেছে। বেশিরভাগ চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ঐদিনই ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি।

৭. ডোপ টেস্টে যারা মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়েছে বা যারা স্বৈরাচারী সরকারের লোক ছিলেন, তাদের চাকরিতে বহাল রেখেছেন। আর যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের চাকরিচ্যুত করেছেন।

৮. যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন, তাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন।

৯. বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কিছু পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করতে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছেন।

১০. পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পরিচিত লোকের মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করেছেন।

১১. ২০০৭ সালে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেন, কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের দোসরার আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ছোটখাটো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুত করেছেন।

১২. অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন মানবিক বিবেচনায় সকল পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের আদেশ দিলেও, পরে স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োজিত দোসররা তা বাস্তবায়নে বাধা দেন।

১৩. অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার পর যদি বিজ্ঞ আদালতে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়; তাহলে গুম-খুনের হুমকি দিয়েছেন। এসবের ভয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেনি।

১৪. অনেক পুলিশ সদস্যকে জোরপূর্বক অথবা স্বাক্ষর জাল করে চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অবসর বা বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।

১৫. পুলিশ প্রধান পি, আর, বি ৮৮৪ প্রবিধান মতে সকল চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকলেও বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের বাধার কারণে তা প্রয়োগ হচ্ছে না।

চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘‘চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। আমরা তাদের বলেছি আলোচনায় বসার জন্য। কিন্তু তারা যেতে চাচ্ছে না।’’

Read Entire Article