ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
কয়েকদিন আগে বিশ্বের শীর্ষ এআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া রেকর্ড পরিমাণ বাজারমূল্য হারিয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক দাবি করে, তারা মাত্র ৬০ লাখ মার্কিন ডলারে উন্নত এআই মডেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এর পরপরই এনভিডিয়ার বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার কমে যায়, যা মার্কিন শেয়ারবাজারের ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
গত দুই বছরে এআই-সংক্রান্ত বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য তিন লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের মূল্য ওঠানামার শিকার হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে—একদল মনে করেন, এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং ভবিষ্যতেও একচেটিয়া মুনাফা ধরে রাখতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে বাকিরা মনে করেন, এনভিডিয়ার উচ্চমূল্য কেবল এআই প্রযুক্তির অতিরঞ্জিত প্রত্যাশারই প্রতিফলন, যা দ্রুত কমতে পারে।
আরও পড়ুন>>
ডিপসিকের সাফল্য এই ধারণা জোরদার করছে যে, উন্নত এআই মডেল তৈরিতে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা জরুরি নয়। মাইক্রোসফট, মেটা, ওপেনএআই এবং অন্যান্য বড় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি জিপিইউ-নির্ভর ডেটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
কিন্তু এনভিডিয়ার এক বড় গ্রাহক জানিয়েছেন, ডিপসিক দেখিয়ে দিয়েছে, কম শক্তিশালী গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ব্যবহার করেও কার্যকর মডেল তৈরি করা সম্ভব।
প্রতিযোগিতার বাজারে নতুন সমীকরণ
এনভিডিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী চিপগুলো ৯০ শতাংশের বেশি মুনাফা অর্জন করে, যা প্রযুক্তি বাজারে এক নজিরবিহীন ঘটনা। তবে প্রতিষ্ঠানটি এখন বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বীর চাপে পড়েছে। লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এনভিডিয়া অপরিহার্য হলেও ইনফারেন্স বা মডেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে। অ্যামাজন, গুগল এবং মাইক্রোসফট নিজেদের চিপ তৈরি করছে, যাতে তারা এনভিডিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।
এআই-সম্পর্কিত বিনিয়োগের বাস্তবতাও এনভিডিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রযুক্তির সম্ভাবনার ওপর আস্থা রাখলেও, এখন পর্যন্ত লাভজনকভাবে তা কাজে লাগানোর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এনভিডিয়ার ভবিষ্যৎ কি সংকটে?
অনেক বিনিয়োগকারী এখনো এনভিডিয়ার প্রতি আস্থা রাখছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, ডিপসিক তাদের সক্ষমতা অতিরঞ্জিত করেছে, যাতে চীন প্রযুক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে থাকার দাবি করতে পারে।
অন্যদের মতে, ডিপসিকের মডেলগুলো মূলত মার্কিন প্রতিষ্ঠানের উন্নত মডেলের ফলাফল বিশ্লেষণ করেই তৈরি হতে পারে।
এনভিডিয়ার পক্ষে থাকা বিনিয়োগকারীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির শক্তিশালী সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম ‘সিইউডিএ’ এবং উন্নত নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি এখনো প্রতিষ্ঠানটিকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখছে।
যদিও এনভিডিয়ার বাজার দখল ও মুনাফার হার কমতে পারে, তবে প্রতিষ্ঠানটি এখনো শীর্ষস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এনভিডিয়া প্রধান জেনসেন হুয়াং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করছেন, যাকে তিনি ‘ফিজিক্যাল এআই’ বলছেন, যেখানে মানবসদৃশ রোবট ও স্বয়ংচালিত গাড়ির মতো বাস্তব বিশ্বের সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়া হবে।
অতএব, এনভিডিয়া সংকটের মুখে থাকলেও একেবারে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। তবে ভবিষ্যৎই বলে দেবে, হুয়াং সত্যিই ভবিষ্যৎদ্রষ্টা কি না।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/