ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
মেহেরপুরের মুজিবনগর আমবাগান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ঐতিহাসিক ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশাল এ বাগান পরিচর্যার অভাবে ছিল বিলীনের পথে। হর্টিকালচার সেন্টারের পরিচর্যায় গাছ থেকে পরগাছা দমন ও পুষ্টির ব্যবস্থা হয়েছে। এতে নতুনভাবে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় বাগানটি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় বাগানের জীর্ণদশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি করে আসছিলেন বাগান রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হোক। এরই অংশ হিসেবে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় আমগাছগুলোকে পুনরুজ্জীবত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেহেরপুর হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধানে প্রায় এক বছর ধরে পরগাছা অপসারণ ও রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করা হয়।
এছাড়া দীর্ঘ সময় বাগানে চাষ না দেওয়ায় মাটি ও গাছের শিকড় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেখানে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সেচ, সার, কীটনাশক, বিভিন্ন জৈব পদার্থ প্রয়োগ করা হয়। গাছের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য গৌণ পুষ্টির জোগান দেওয়া হয়েছে। রোগাক্রান্ত গাছের বাড়তি পরিচর্যার পাশাপাশি ফাঁকা হয়ে যাওয়া স্থানগুলো লাগানো হয়েছে নতুন চারা। নতুন লাগানো চারাগুলোর বেড়ে ওঠার জন্য লোহার বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে। ডাল থেকে বের হচ্ছে নতুন কুশি। এতে বদলে গেছে বাগানের চিত্র। যেদিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই সবুজের সমারোহ।
জানা গেছে, গাছের সংখ্যা ঠিক রাখার জন্য প্রতিটি গাছে ট্যাগ লাগানো হয়েছে। পরিচর্যার পর নতুন পুরাতন মিলিয়ে সর্বমোট গাছের সংখ্যা এক হাজার ২০০টি। এর মধ্যে পুরাতন গাছ ছিল এক হাজার ৪০টি।
ব্রিটিশ সময়ে জমিদার কেদারনাথ চৌধুরীর স্ত্রীর আমের আচারের বাগান ছিল আমবাগানটি। কালক্রমে তা হয়ে ওঠে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের শপথ ভূমি। ইতিহাসের পাতায় বাগানটির নাম স্বগৌরবে স্থান পেলেও আমবাগান রক্ষায় কোনো উদ্যোগ ছিল না। জেলা প্রশাসন প্রতি বছর বাগানের ফল ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করলেও বাগান পরিচর্যায় তেমন কোন কার্যক্রম ছিল না। ফলে ক্রমেই মারা যাচ্ছিল শতবর্ষী গাছগুলো। গাছের ডাল ছিল পরগাছায় ভরপুর। ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার ডাল শুকিয়ে ক্ষত তৈরি হতো এসব বৃক্ষে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সেচ ও সার না পেয়ে অনেক গাছ মারা যায়। ফাঁকা হতে থাকে ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী কেদারনাথ বাবুর আমবাগান।
মুজিবনগরের বাসিন্দা আফজাল হোসেন জানান, প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসন থেকে বাগানের ফল ইজারা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় হলেও ইজারা গ্রহণকারীরা নানাভাবে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। মরা বাগান তাজা করেছে হর্টিকালচার সেন্টার। সারি সারি আমগাছগুলো সতেজ ও সবুজে ভরে গেছে। গাছগুলোর এমন রূপই দেখতে চাই।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আল হেলাল বলেন, বাগানের বর্তমান রূপে আমরা মুগ্ধ। পাঁচ বছর আগে একবার এখানে এসে বাগানের জীর্ণদশা দেখে হতাশ হয়েছিলাম। বাগান রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হোক।
পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ জানান, গাছপালা কমে যাওয়ায় জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনুকূল পরিবেশ রাখতে এ আমগানের মতো বাগানগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলো যেমন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে তেমনি এলাকার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাগান রক্ষার এই ধারা সংশ্লিষ্টরা ধরে রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেন দেশের খ্যাতনামা এই কৃষিবিদ।
মেহেরপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, বাগানটির বর্তমান অবস্থা দেখলে যে কারও প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। যা হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। বাগান টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব সকলের। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাগানটির দিকে সুদৃষ্টি রাখবেন এ প্রত্যাশা।
এফএ/এএসএম