ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তেতুলিয়া ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতুর স্থান পরিবর্তন নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। পূর্বনির্ধারিত স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছে তারা। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) লিখিতভাবেও অবহিত করেছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এরই প্রেক্ষিতে এলজিইডি সেতু তৈরির প্রস্তাবনা পাঠায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। তবে এরইমধ্যে নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মোহনপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসী সেতু নির্ধারিত স্থানে করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে তারা। সেতু না থাকায় মোহনপুর, পূর্ব ফাগুয়া, হানবীর, ভাটাপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, নাপিতপাড়াসহ ৭-৮ গ্রামের শিক্ষার্থীরা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যায়। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় বৃদ্ধদের। অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য ও হাওরের ধান পরিবহনেও দুর্ভোগে পড়তে হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেতুটি তৈরির জন্য ২০১৯ সালে এলজিইডিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে সেতুর আইডি তৈরি করে এলজিইডি। পরে নিয়মানুযায়ী প্রকল্প তৈরি করে গুরুত্ব বিবেচনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে আবারো সেতুটির চাহিদা চেয়ে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরে আবেদন করে উপজেলা এলজিইডি। কিন্তু সেতুর বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি একই এলাকায় দেড় কিলোমিটার দূরে নতুন একটি সেতুর অনুমোদন দেওয়া হয়। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পূর্বনির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে অন্য স্থানে সেতু নির্মাণের বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ মোহনপুরসহ কয়েক গ্রামের মানুষ। নতুন স্থান পূর্বের স্থানের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি এলাকাবাসীর। এ নিয়ে তারা এলজিইডি অফিসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মোহনপুর গ্রামের শেখ মোহাম্মদ সুলতান বলেন, নদীর ওপারে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭-৮ গ্রামের কয়েকশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। শুকনার সময় ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে যায়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। এছাড়া বয়স্ক রোগীদের নিয়ে চিকিৎকের কাছে যাওয়া যায় না। হাওরের ধান পরিবহন না করতে পারায় কম দামে বিক্রি করতে হয়। একটি সেতুর অভাবে এখানে মানুষের জীবন থমকে আছে।
তিনি আরও বলেন, এই সেতুটি এলাকাবাসীর জন্য কতটুকু দরকার বলে বোঝানো যাবে না। এতদিন আমরা আশায় ছিলাম সেতুটি হলে কষ্ট দূর হবে। কিন্তু সম্প্রতি জানলাম এলাকার একজন সচিবের তদবিরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্ধারিত জায়গায় না হয়ে অন্য জায়গায় হবে। এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি।
মোহনপুর গ্রামের শাহ জামাল ও উজ্জল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিনের প্রস্তাবিত সেতু বাদ দিয়ে ক্ষমতাবান কারো তদবিরে ভুল জায়গায় সেতু করলে মানুষের উপকারে আসবে না। উল্টো জনগণের টাকা গচ্ছা যাবে। যেখানে সেতুটি করতে যাচ্ছে ওই জায়গায় তেমন কোনো মানুষজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ স্কুল নেই। পূর্বনির্ধারিত স্থানে সেতুটি করা হোক। এতে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
পাশের গ্রাম কেন্দুয়ার কাইয়ুম ও সুকুমার বলেন, সেতু মোহনগপুর গ্রামের ওপর দিয়েই করা হোক। এতে ৭-৮ গ্রামের হাজার হাজার লোকের উপকার হবে। দীর্ঘদিন ওইসব গ্রামের মানুষ একটি সেতুর স্বপ্ন লালন করে আসছে।
তেতুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজন কর বলেন, নদীর পশ্চিম পাশের অনেকগুলো গ্রামের মানুষ হওরে ফসল উৎপাদন করেন। সেতু না থাকায় ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারেন না। কম দামে জমিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। সেতুটি অনেক মানুষের জীবনমান বদলে দিতে পারে। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো, দ্রুত সেতুটি বাস্তবায়ন করা হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সোয়েব ইমরান বলেন, মোহনপুর গ্রামের সেতুটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি হলে এলাকার বেশ কয়েক গ্রামের মানুষের উপকার হবে। বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত, ধান পরিবহনসহ নানা সুবিধা হবে। আমরা এর আগে সেতুটির প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু বরাদ্দ পাইনি। অন্য যে সেতুটি হচ্ছে সেটি এর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি ওই সেতুটিও হবে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সঙ্গে কথা বলবো।
এইচ এম কামাল/এফএ/এএসএম