ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে রয়েছে টমেটো সস, কেচাপ, পেস্ট, আমের পাল্প, বিদেশি ফল, বেভারেজ প্রভৃতি। ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য ও সেবায় পরবর্তীসময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স কমালেও বহাল আছে অধিকাংশ পণ্যে।
প্রক্রিয়াজাত টমেটো পণ্যের ওপর নির্ভরশীল দেশের হাজার হাজার কৃষক। বড় বড় কোম্পানি প্রতি বছর কৃষকের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ টমেটো কিনে নেয়। এতে লাভের আশায় প্রতি বছর বাড়ছে চাষাবাদ। হঠাৎ সরকার টমেটোজাত পণ্যে ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ করেছে।
এবার চাষ করলেও ঠিক ফসল ওঠার মৌসুমে সরকারের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। আর দাম বাড়লে ক্রেতা কম কিনবে। এজন্য কোম্পানিগুলো টমেটো কিনছে না। ফলে ২০ বছর আগের মতো রাস্তায় ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাদের কাছে কোনো বিকল্পও নেই।
- আরও পড়ুন
- নাটোরে টমেটো ফেলে সড়ক অবরোধ কৃষকদের
- ভ্যাটের চাপে টমেটো ফের ‘আশীর্বাদ’ থেকে ‘অভিশাপ’
- ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় চাহিদা কমার শঙ্কা, উদ্বিগ্ন চাষিরা
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) নাটোর, রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলার কৃষক নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে তাদের ক্ষেত্রে উৎপাদিত টমেটো রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ক্ষুব্ধ কৃষকরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বর্ধিত ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
টমেটো ও আমের ওপর ‘বর্ধিত ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহার কর, কৃষকের জীবন বাঁচাও’ স্লোগান দিয়ে কৃষকরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এসময় কৃষিবিরোধী এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন তারা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে টমেটো নিয়ে আসা কৃষক মো. আবু সাঈদ বলেন, আমরা কোম্পানিকে টমেটো দিতে নিয়ে এসেছিলাম। ভ্যাট বাড়ানোর কারণে কোম্পানি টমেটো রাখছে না। সরকার যদি ভ্যাট না কমায়, আগের অবস্থানে না নিয়ে আসে তাহলে তারা তো টমেটো নেবে না। আমাদের দাবি কৃষকদের স্বার্থে যেন ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো হয়। তাহলে আমরা টমেটো কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারবো।
মানববন্ধনে আসা এক নারী বলেন, আমরা এখানে এসেছি কৃষক ভাইদের স্বার্থে। এখন কোম্পানির কাছে টমেটো বিক্রি করা যাচ্ছে না। সামনে আবার আমের মৌসুম আসছে। তখন যদি কোনো কোম্পানি আম না নেয়, তাহলে তো আমরা ধরা খেয়ে যাবো। কোম্পানি যদি এসব না নেয় তাহলে আমরা যে মালিকের কাজ করি তারা তো মজুরি দিতে পারবে না। তাই আমরা চাই সরকার যেন ভ্যাট কমায়।
আরেক কৃষক বলেন, এই ভরা মৌসুমে আমরা টমেটো বিক্রি করতে পারছি না। আসলে আমাদের জন্য কেউ নেই। ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের কাছ থেকে যে কোম্পানিগুলো পণ্য নিতো তারা এখন নেওয়া বন্ধ করে রেখেছে ভ্যাট বাড়ানোর কারণে। সরকারের কাছে আবেদন, তারা যেন ভ্যাট-ট্যাক্স কমায়।
তিনি বলেন, টমেটো বিক্রি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কৃষকদের একটাই দাবি, আমরা যেন আমাদের ফসলগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারি। এখন আমাদের এক বিঘা ফসল করতে ৭০ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু আমরা জমি থেকে পাচ্ছি ৩০ হাজার টাকা। জমিতে যে শ্রমিক কাজ করে তাদেরও মজুরি দিতে পারছি না। খুবই বিপাকে আছি। এখন কোম্পানি যদি মাল না নেয় তাহলে আমরা বিশাল বিপদে পড়ে যাবো।
নাটোরের কৃষক জাহিদুল বলেন, এসব পচনশীল জিনিস, দু-তিনদিন থাকলেই পচে যায়। দেখুন আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কোনো কোল্ড স্টোরেজ নেই। বিদেশ থেকে টমেটো আমদানি করে খাচ্ছি। অথচ আমাদের দেশের টমেটো কোল্ড স্টোরেজ না থাকার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানাই, সরকার যেন আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করে দেয়। কৃষিতে যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে এটা যেন সরকার প্রত্যাহার করে নেয়। আমাদের দাবি না মানলে আরও কঠোর আন্দোলন করবো।
আন্দোলনে আসা আরেক কৃষক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। কিন্তু এখন টমেটো বিক্রি করতে পারছি না। এগুলো নিয়ে সড়কে ফেলে রেখেছি।’
আন্দোলনে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা খরচ করে কৃষকরা চাষ করেছেন। তার ঘাম ঝরানো ফসল, কষ্টের ফসল পথে ফেলে দিয়েছে। এ ফসলের ওপর যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই।’
জেডএইচ/এএসএ/জিকেএস