ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের নাম পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ‘সচেতন শিক্ষার্থী’র ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পরে বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আরেকদল শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় সচেতন শিক্ষার্থীরা ‘বিভাগের নাম পরিবর্তন, চলবে না চলবে না’, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার চাই’, ‘বিভাগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চলবে না চলবে না’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, সন্ত্রাসীদের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
অপর দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ‘তুমি কে আমি কে, দুষ্কৃতকারী দুষ্কৃতকারী, কে বলেছে কে বলেছে, জালিয়াতকারী জালিয়াতকারী’, ‘নাম চেঞ্জের টালবাহানা, মানি না মানব না’, ‘আমার স্বাক্ষর করল কে, এর উত্তর আগে দে’, ‘স্বাক্ষর জালিয়াতির বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
নাম পরিবর্তন না চাওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামেই এ বিষয়টি পড়ানো হয়। শুধু যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে রয়েছে। এ ছাড়া বিসিএস এবং পিএসসির ক্ষেত্রে জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সুযোগ-সুবিধা বেশি।
নাম পরিবর্তনের বিপক্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা বলেন, “জিওগ্রাফি বিষয় পিএসসিতে নিবন্ধিত সাবজেক্ট যার সাবজেক্ট কোড রয়েছে (৩১১)। কিন্তু এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজি বা শুধু এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স কোনটাই বিষয় হিসেবে পিএসসিতে নিবন্ধিত নেই, বিষয় কোডও নেই। ফলে জিওগ্রাফি না থাকলে আমরা বিসিএসসহ (শিক্ষা) জিওগ্রাফির নিবন্ধিত সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারব না।”
তিনি বলেন, “দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজে যেখানে ভূগোলের শিক্ষক নেওয়া হয়, সেগুলোয় নিয়োগ পেতে ভূগোল বিষয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যা পরিবেশ বিজ্ঞানে নেই। ভূগোলেরই নিজস্ব ক্যাডার রয়েছে পিএসসিতে, যা পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বা শুধু পরিবেশ বিজ্ঞানের নেই। তাই বিভাগের নাম যা আছে, সেটাই রাখতে হবে।”
অপর দিকে নাম পরিবর্তন চাওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, ভর্তির সময় তারা এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড জিওগ্রাফি দেখে ভর্তি হলেও ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারেন, বিভাগের নাম জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। বিভাগের নাম পরিবর্তন করার সময় স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর নিয়ে বিভাগে আবেদনপত্র দিয়ে যাবতীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করার বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে বিধায় তারা এখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভাগের নাম পরিবর্তন চান।
নাম পরিবর্তনের পক্ষে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “গত ৫ মাস ধরে প্রশাসনের নিকট বিভাগের সময়োপযোগী নাম দেওয়ার যে দাবি, তা একাডেমিক কাউন্সিল ও পরবর্তী সিন্ডিকেটে উত্থাপন করতে হবে। যদি প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে না পারে, তাহলে আমরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করে দেব। আর যে স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়েছে এ বিষয়ে আমরা হাইকোর্টে মামলা করব। সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।”
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায় বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভাগে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ থাকা জরুরি। শিক্ষার্থীরা এভাবে মুখোমুখি দাঁড়ালে শান্তি বিনষ্ট হবে। তারা তো ইতোমধ্যেই তাদের দাবিগুলো আমাদের জানিয়েছেন, এখন আর এখানে কর্মসূচি পালনের প্রয়োজন নেই। একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি নিজেও থাকব, সেখান থেকে উপযুক্ত সিদ্ধান্তটাই আসবে বলে আশা করি।”
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বলেন, “বিভাগের নাম পরিবর্তন কোন সহজ বিষয় নয়। কেউ চাইলেই ইচ্ছেমতো নাম দিতে পারে না। এটার একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে। তারা যেহেতু প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছে, আমরা দুই পক্ষের মেসেজ পেয়েছি। আজ বেলা ৩টায় একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আছে, সেখানে তাদের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”