শুরুতে হম্বিতম্বি, এখন চীনের প্রতি নরম সুর ট্রাম্পের

12 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তার বক্তব্য এবং সিদ্ধান্তে কিছুটা নমনীয়তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই, চীনের সঙ্গে ভালোভাবে চলতে চাই।’ তার এই মন্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে যে, বেইজিং হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি এবং পরমাণু অস্ত্র কমানোর ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও পড়ুন>>

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং চড়া শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারের সময়ও তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথাই বলছেন, যা মূলত চীনে উৎপাদিত ফেন্টানাইল সংশ্লিষ্ট রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হতে পারে।

তবে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

চীনা বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এই অবস্থানকে বাস্তবসম্মত হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কার্টার সেন্টারের চীনা উপদেষ্টা লিউ ইয়াওয়েই বলেছেন, নির্বাচনের সময় থেকে অভিষেক পর্যন্ত ট্রাম্পের অবস্থান অনেকটাই ইতিবাচক মনে হচ্ছে, যা অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো।

প্রথম মেয়াদে বন্ধুত্বের পর শীতল সম্পর্ক

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। পরে নিজেও বেইজিং সফরও করেন। তবে ২০১৮ সালে তিনি চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন, যা দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

এরপর কোভিড-১৯ মহামারি এবং তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। জো বাইডেনের প্রশাসনও চীনের বিরুদ্ধে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে এবং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত জোট গঠন করে চীনের প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা চালায়।

রুবিওর কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। চীনের প্রতি বরাবরই কঠোর মনোভাব পোষণকারী রুবিও বলেছেন, চীন আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, তারা প্রতারণা করে, সাইবার হামলা চালায় এবং আমাদের কাছ থেকে প্রযুক্তি চুরি করে নিজেদের সুপার পাওয়ার বানিয়েছে।

তবে তিনি স্বীকার করেছেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই রুবিও অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ট্রাম্পের আমলেও বজায় থাকবে।

চীনের কৌশলগত প্রস্তুতি

বেইজিং ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ খুঁজছে; পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য উত্তেজনার জন্যেও প্রস্তুতি নিচ্ছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকে শিক্ষা নিয়ে চীন এমন আইন পাস করেছে, যা প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।

হাডসন ইনস্টিটিউটের চীন কেন্দ্রের পরিচালক মাইলস ইউ বলেন, ট্রাম্প এখন আরও সূক্ষ্ম এবং কৌশলীভাবে চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব বজায় রাখতে চান, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় সংঘাত চান না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে ভবিষ্যতে বৈঠক হতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চীন এরই মধ্যে টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে, যা বেইজিংয়ের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

তবে চীন জানে, ট্রাম্প যে কোনো সময় কঠোর নীতি গ্রহণ করতে পারেন। তাই বেইজিং যেমন ইতিবাচক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতিও রাখছে।

সূত্র: এপি
কেএএ/

Read Entire Article