ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
দেশে গত ১০-১৫ বছরের যত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এর প্রত্যেকটির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিল বলে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখেছি কীভাবে স্থানীয়রা রাজনৈতিক শক্তিকে প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে তাদের তাঁবেদার হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির মতো ব্যবহৃত হয়েছে। কীভাবে মানুষকে নিপীড়ন করেছে। এগুলোর কোনোটারই বিচার হয়নি।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রামুর ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছিল। ১টি বাদী পরবর্তীতে উত্তোলন করে নিয়েছিল। ১৮টি মামলা এখনও চলমান। ২০১২ সালের ওই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর আদালত বলেছেন, কিছু হয়নি। অধিকতর তদন্ত লাগবে। পরে বিচারিক তদন্তে ১৯৮ জনের নাম এসেছিল। যার প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, না হয় যুবলীগ, না হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন কোর্টে দাখিল হলেও প্রকাশ হয়নি। রিট এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। রামুর ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। গত ১৫ বছরে এ রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল।
জুলাই-আগেস্টের বিচার নিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া বিচার করা যায় না। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনো জুলাই-আগেস্টের ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়নি।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, আগস্ট মাসের গণহত্যা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে গুম-খুনের পাশাপাশি আরও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। গণগ্রেফতার, গণ আটক, থানায় এমনকি কারাগারে নির্যাতন হয়েছে। হয়রানি একটা দৈনন্দিন এবং স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ট্যাক্স ফাইল নিয়ে টানাটানি করা, সম্পত্তি নিয়ে সমস্যায় ফেলা, চাকরি নিয়ে ঝামেলায় ফেলা এমনকি সামাজিক হয়রানিও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাকস্বাধীনতা নিয়ে আমরা গত পাঁচ মাসে অনেক কথা বলেছি। এখন বলতে পারছি। কিন্তু কীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো? সবতো ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে করানো হয়নি। গণমাধ্যমের মালিক নিজেরাও করেছে।’
তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী দেশের ভেতরে-বাইরে বিশেষ করে অনলাইনে সারাক্ষণ একটা অস্বীকারের মধ্যে আছে। যে গত জুলাই-আগস্ট কোনো কিছু ঘটেনি। সবাই নিজেদের খুন করেছে। আশা করছি তারা যদি দুটি মুহূর্ত বা দুই মিনিট চোখ বন্ধ রেখে একটু চুপ করে অন্তত স্বীকার করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো দায় স্বীকার করছে না। আওয়ামী লীগের অনেকে এখনো ডিনায়ালের মধ্যে আছে। কি পরিমাণ ক্রাইম (অপরাধ) তারা করেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের সোসাইটি ও তরুণ প্রজন্ম একটা রিকন্সিলিয়েশনের জায়গায় যাবে। আওয়ামী লীগ বলছে তিন হাজার পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। আমরা ৪৪ জনের নাম দিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কেউ পেলে আমাদের দেখান। আওয়ামী লীগতো তার ন্যারেটিভ দিচ্ছে। তারা মনে করছে এই সরকারের পর যদি কোনো সরকার যদি অজনপ্রিয় হয়ে যায় তার ন্যারেটিভ ইম্পোজ করবে।
তিনি বলেন, এবারের যে আন্দোলন, বাংলাদেশের সোসাইটির যে ম্যাচুরিটি এটা অবিশ্বাস্য। ৫ আগস্টের পরে সাত-আটদিন পুলিশ ছিল না। এই সোসাইটির প্রতিটি ঘরে হানাহানি হওয়ার কথা ছিল। ১৫ থেকে ২০ হাজার লোককে যদি মেরে ফেলা হতো তাহলে আমাদের সোসাইটি, জাতি ড্যামেজ হয়ে যেতো। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে। আমাদের সংবাদপত্র উন্নত হয়েছে। আমাদের সত্য অন্বেষণের জন্য জায়গাটা উন্নত হয়েছে।
নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, ‘আয়না ঘরের মূল তত্ত্বাবধায়কদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হলেও কেউ গ্রেফতার হননি। কেন? র্যাবের ডিজি বলেছে র্যাবে আয়না ঘর ছিল। ডিজিএফআই কেন বলে না?’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাইয়িদ আব্দুল্লাহ এবং উপস্থাপনা করেন ড. শৃরুহ মির্জা ও আশরাফুল হাসান।
এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম