ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ঝালকাঠির রাজাপুরে নির্মিত রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা এখন অভিভাবকহীন। নির্মাণকাজ শেষের প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নির্দিষ্ট দপ্তর নেই। স্থানীয় এক ব্যক্তি বিনা বেতনে শুধু বকশিশ নির্ভর করে দেখাশোনা করছেন। কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের অধীনে দেখাশোনা বা কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিলে সুরক্ষিত থাকবে বলে ধারণা ঝালকাঠির বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মীদের।
তিরিশের দশকের কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ ছিলেন ব্যতিক্রম। রূপসী বাংলার এই কবি তার কবিতায় বলেছেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে—এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয়—হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে।’ ধানসিড়ির কাছে ছুটে আসতে কবির এই ‘আকুতি’ রূপসী বাংলার সৌন্দর্যের স্মারক।
কবির প্রয়াণের ৭০ বছর পর ঝালকাঠি সদর ও জেলার রাজাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ধানসিড়ি নদীর পিংড়ি এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা ও পাঠাগার। হ্যান্ড্রি বেভারেজের বইয়ে যদিও ‘ধানসিদ্ধি’ নদী বলা হয়েছে। কালের বিবর্তনে খালে পরিণত হলেও নদীর মর্যাদায় একে বাঁচিয়ে রেখেছে জীবনানন্দের কবিতা।
জীবনানন্দ গবেষক আমীন আল রশীদ তার ‘জীবনানন্দের মানচিত্র’ বইয়ে বিভিন্ন সূত্র ও চিঠিপত্রের সাহায্যে স্পষ্ট করেছেন, কবির জন্ম বরিশালের কালিবাড়ি রোডে। এমনকি তার মা কবি কুসুম কুমারী দাশের জন্মও বরিশালে। কবি কেন ধানসিড়ির কাছে ছুটে আসতে চাইতেন? ধানসিড়ির সঙ্গে সম্পর্ক হলো কীভাবে তার? কারণ এই নদী হয়ে কবি বরিশাল থেকে কলকাতা যাতায়াত করতেন।
বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এমনকি কলকাতা সিটি কলেজে চাকরিসহ শেষ জীবনে তার ৮ বছর কাটে কলকাতায়। তখন বরিশাল থেকে কলকাতা যাতায়াতের জন্য খুলনা পর্যন্ত স্টিমারে যেতে হতো। তখন ঝালকাঠির ধানসিড়ি নদীর পাশ দিয়ে গাবখান চ্যানেল হয়ে যেতে হতো খুলনা পর্যন্ত। এভাবেই কবি ধানসিড়ির প্রেমে পড়েন।
সংগ্রহশালা নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আবদুল মান্নান তাওহীদ বলেন, ‘২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে। ঠিকাদার হিসেবে চেষ্টা করেছি কাজটি সুন্দর ও যথাযথভাবে করার। কাজ শেষ হয়েছে। যে কোনো সময়ে কর্তৃপক্ষকে এটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কবির জন্মদিনে সংগ্রহশালা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি ছিল কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী।’
কবির প্রয়াণের ৭০ বছর পরে হলেও নদীটির তীরে তোলা হয় সংগ্রহশালা। স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি এখনো। কবির এবারের জন্মদিনেও কেন তা উদ্বোধন করা গেল না, এমন প্রশ্নে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে। মিটিং মাইনোরসে একটি সিদ্ধান্ত আসবে, সংগ্রহশালাটি রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্ব নেবে কে। পাউবোর মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনা চেয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। দেখাশোনা ও সংগ্রহশালা পরিচালনার জন্য লোক নিয়োগ দিলেই এটি উদ্বোধন করা হবে।’
এসইউ/জেআইএম