ছোট যমুনায় মা মাছ নিধনের মহোৎসব, ভাগ পাচ্ছে প্রভাবশালীরা

12 hours ago 4
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

নওগাঁয় ছোট যমুনা নদীতে মা মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে। নদীর পানি কমার পর থেকেই সদর উপজেলায় মৎস্য বিভাগের ঘোষিত অভয়াশ্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় অবাধে নিষিদ্ধ জাল ও বড়শি দিয়ে চলছে মাছ শিকার। এতে ব্যাহত হচ্ছে মা মাছের প্রজনন বৃদ্ধি কার্যক্রম।

বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপর উপজেলার তিলকপুর ও বক্তারপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীতে সরেজমিন দেখা যায়, নদীর দুই পাশের অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকা মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। নির্ধারিত এ এলাকায় মাছ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের বিষয়টি বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড টানিয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে মৎস্য বিভাগ। এরপরও নির্দেশনা না মেনে দিনভর অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা। কেউ দিনভর মাছ ধরছেন বড়শি ফেলে। আবার কেউ দিনে-রাতে নিষিদ্ধ চায়না ও কারেন্ট জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন। অবৈধভাবে মাছ শিকারে গ্রামের সাধারণ মানুষদের প্রয়োজনীয় জালসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছেন প্রভাবশালীরা। বিনিময়ে জালে ধরা পড়া মা মাছসহ বড় মাছ নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয় তারা। এ নদীতে অভয়াশ্রম ছাড়াও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে ঘের তৈরি করে মাছ ধরতে দেখা গেছে শিকারিদের।

ছোট যমুনায় মা মাছ নিধনের মহোৎসব, ভাগ পাচ্ছে প্রভাবশালীরা

এ নদীতে নিয়মিত বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে আসা শিকারি তিলকপুর ইউনিয়নের ইকরতারা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, বড়শি দিয়ে ছোট আকারের পুটি মাছ ছাড়া তেমন দামি কোনো মাছ পাওয়া যায় না। তাই এতে খুব বেশি অন্যায় হচ্ছে না। কিন্তু এই অভয়াশ্রমে নিয়মিত চায়না এবং কারেন্ট জাল দিয়ে মা মাছ শিকার করছে কয়েকটি চক্র। এদের কারণে ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছগুলো নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। নদী আজ প্রায় মাছ শূন্য হতে বসেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে দেশীয় মাছের তীব্র সংকট দেখা দেবে।

একই গ্রামের আরেক শিকারি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চায়না এবং কারেন্ট জাল দিয়ে বোয়াল, রুই, মৃগেলসহ বিভিন্ন বড় আকারের মাছ এবং মা মাছ ধরছে নদীর দুই পাড়ের প্রভাবশালীরা। তারা নিজেরাই অবৈধ এসব জাল শিকারিদের সরবরাহ করে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকায় মৎস্য বিভাগ সবকিছু জেনেও নীরব ভূমিকায় থাকে। এদের দৌরাত্ম্যে মা মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।

ছোট যমুনায় মা মাছ নিধনের মহোৎসব, ভাগ পাচ্ছে প্রভাবশালীরা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদী তীরবর্তী ইকরতারা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, অভয়াশ্রম থেকে এই বছর অন্তত ২০ লাখ টাকার মাছ লুট হয়েছে। প্রভাবশালীদের এই সিন্ডিকেটে মাঝি আলাউদ্দিন ও তার ছেলে লিটনের নেতৃত্বে মোজাম্মেলসহ অন্তত ১৫-২০ জন কাজ করেন। মৎস্য বিভাগ একাধিকার এ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলেছে। এরপরও তাদের দৌরাত্ম্য কমেনি। বর্তমানে রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা এবং সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তারা দুই দফায় মাছ ধরে বিক্রি করে।

পৌরসভার কোমাইগাড়ী এলাকায় অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ ধরা শিকারি মোহাম্মদ পিয়াস বলেন, প্রতি বছর নদীর পানি কমলে এখানে ঘের দিয়ে মাছ ধরি। বড় আকৃতির বোয়ালমাছসহ বিভিন্ন মাছ জালে আটকা পড়ে। এখানে কিছু মা মাছও আটকে থাকে। এটা আইনত অপরাধ তা জানা ছিলো না।

ছোট যমুনায় মা মাছ নিধনের মহোৎসব, ভাগ পাচ্ছে প্রভাবশালীরা

নওগাঁ সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. বায়েজিদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, মৎস্য অভয়াশ্রমে কোনো উপায়ে মাছ ধরার সুযোগ নেই। এটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যে বা যারা ছোট যমুনা নদীতে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।

আরমান হোসেন রুমন/এএইচ/জিকেএস

Read Entire Article