ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি যেভাবে সামলালো মেক্সিকো ও কানাডা

2 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম যখন ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোর রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ সাময়িকভাবে স্থগিত করতে রাজি হয়েছেন, তখন তাকে বেশ উজ্জীবিত দেখাচ্ছিল। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেইনবাউম জানান, এই শুল্ক ওইদিন মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ট্রাম্প শেষ মুহূর্তে সেটি এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।

একইদিনে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও শুল্ক থেকে সাময়িক ছাড় পাওয়ার কথা জানান। তবে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক ঠিকই কার্যকর হয়েছে। এর ফলে, উত্তর আমেরিকার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট আপাতত এড়ানো গেলেও ভবিষ্যতে শুল্ক আরোপের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

মেক্সিকো-কানাডার কৌশলগত অবস্থান

ক্লাউদিয়া শেইনবাউম শুল্ক নিয়ে আলোচনার পুরো সময়জুড়ে আত্মবিশ্বাসী অবস্থান ধরে রেখেছিলেন। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক সম্মানজনক রাখলেও দৃঢ় ছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট তার টিমকে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন, যদিও সেই পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

আরও পড়ুন>>

অন্যদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেন। তিনি ১৫৫ বিলিয়ন কানাডীয় ডলার মূল্যের আমদানি পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। শোনা যায়, আলোচনার সময় ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, যা ট্রুডো প্রত্যাখ্যান করেন।

সীমান্ত নিরাপত্তা ও শর্তপূরণ

শুল্ক থেকে সাময়িক রেহাই পেতে মেক্সিকো ও কানাডা সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেক্সিকো তার উত্তর সীমান্তে অতিরিক্ত ১০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে, যা আগের ১০ হাজার সদস্যের সঙ্গে যোগ হবে। এছাড়া, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মাদক চোরাচালান ও নিরাপত্তা বিষয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

কানাডাও নতুন করে সীমান্ত নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশটি ১৩০ কোটি কানাডীয় ডলারের নিরাপত্তা প্রকল্প ফের চালু করেছে এবং ‘ফেন্টানাইল জার’ নামে একজন বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবেন।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা

মেক্সিকোর ৮০ শতাংশ এবং কানাডার ৭৭ শতাংশ রপ্তানি পণ্যই যুক্তরাষ্ট্রে যায়। তাই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে দেশগুলোর অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতো। অনুমান করা হচ্ছে, মেক্সিকোর অর্থনীতি ২০২৫ সালে দুই থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারতো।

তবে মেক্সিকো ও কানাডার কৌশলগত পদক্ষেপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাত, বিশেষ করে গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপও শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে।

মেক্সিকো ও কানাডার কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প ভবিষ্যতে আংশিকভাবে হলেও শুল্ক আরোপ করতে পারেন। পাশাপাশি, ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডার মধ্যে বিদ্যমান মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) পুনঃমূল্যায়নের আগেই ট্রাম্প এটি বাতিল বা নতুন করে আলোচনায় আনতে পারেন।

এ অবস্থায় উত্তর আমেরিকার দেশগুলো বিকল্প বাজারের খোঁজ করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি মেক্সিকো ও কানাডাকে নতুন অর্থনৈতিক কৌশল নিতে বাধ্য করছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

Read Entire Article