দ্রুত নির্বাচন দাবির স্মার্ট যুক্তি বিএনপির

4 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

খামাখা নয়, যৌক্তিক কিছু কারণেই জরুরি সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি। ৫ আগস্টের পর থেকেই নানা ভাষায় এই ‘চাওয়া’ প্রকাশ করে আসছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সময় যত গড়াবে গন্ডগোল তত পাকবে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবেন, দ্রুত নির্বাচন দিলে ইউনূস সরকার মানসম্মানে বিদায় নিতে পারবে- এ ধরনের নানা ভার্সনে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলে আসছেন তারা। যেন আরেকটি ওয়ান ইলেভেন ডাকা না হয়, বিএনপিকে মাইনাস করার সাহস যেন দেখানো না হয়, বিএনপিকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যাবে না- এ ধরনের সতর্কতাও দেয়া হচ্ছে নিয়মিত।

এসব সতর্কতা ও নানা কথার মূল অর্থ দ্রুত নির্বাচন। সর্বশেষ রবিবারও অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিয়ে স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এ মন্তব্য করেছেন তিনি। এ কথাও বলেছেন, তাদের দেয়া ৩১ দফার সাথে এখনকার প্রস্তাবগুলোর তেমন পার্থক্য নেই। নিজের উপলব্ধি জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন হত্যা, খুন, ধর্ষণের খবরে পীড়িত বোধ করেন। তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে ছাত্ররা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।

বলার অপেক্ষা রাখছে না, আওয়ামী লীগ নিদারুণভাবে উধাও হয়ে যাওয়ায় বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় এবং আনপ্যারালাল দল। এমন সম্ভাবনার মাঝে নতুন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। চ্যালেঞ্জও যোগ হয়েছে। বিএনপির সামনে রাজনৈতিক শক্তি বলতে জামায়াতে ইসলামী এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। ভোট বা জনপ্রিয়তার দৌড়ে বিএনপির ধারেকাছেও নয় জামায়াতে ইসলামী। এনসিপি এখনো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিতই হয়নি। নিবন্ধন পেয়ে যাবে শিগগিরই। নমুনা বলছে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, মাঠের চিত্র তত বদলাবে।

দল গঠনের পর, এমন কি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরও বিএনপিকে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি, যা হয়েছে গত আওয়ামী লীগের ১৫-১৬ বছরে এবং ওয়ান ইলেভেনের দুই বছরে। এর বিপরীতে এই কঠিন সময়ে এক অর্থে দলটি সাংগঠনিকভাবে শক্ত-পোক্ত হয়েছে। অনবরত মার খাওয়ার পরও তারা মাঠ ছাড়েনি। নেতা-কর্মীদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকার সুফলও পেয়েছে বিএনপি। প্রথমে ওয়ান ইলেভেন এবং পরে আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপিকে ভাঙার নানা আয়োজন হয়েছে। তা সফল হয়নি। দল ছেড়েছেন উকিল আব্দুস সাত্তার, শাহজাহান ওমর, তৈমুর আলম খন্দকার পর্যায়ের হাতে গোনা কয়েকজন। এতে তারা নিজেরাই জনমের মতো পঁচেছেন। কলঙ্কিত হয়েছেন। বিএনপি হয়েছে আপদমুক্ত। তা বিএনপিকে শক্তি জুগিয়েছে। স্থিতিশীল করেছে দলটির সাংগঠনিক অভিযাত্রাকে। আর নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একচ্ছত্র নেতৃত্ব।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব দিক বিবেচনায় এমন শক্তি-সামর্থ্য ও কম্ফোর্ট জোনে থাকার পরও নির্ভার হতে পারছে না বিএনপি। ভাবতে হচ্ছে নানা দিক। দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নেতাদের উপলব্ধিও বাড়ছে। বিএনপি বারবার মত দিয়েছে, নির্বাচিত সরকারই রাষ্ট্রের সংস্কার ভালো করতে পারবে। তারা সংস্কারের প্রয়োজনে নির্বাচন পেছানোর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান জানিয়েছে। তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। বিএনপি দায়িত্ব পেলে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু, দলের মধ্যসারির কতক নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড দিন যত যাচ্ছে বিএনপির জন্য বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করছে।

কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত দখলদারি, চাঁদাবাজিতে বিএনপির ওই শ্রেণিটির সম্পৃক্ততা মিলছে। প্রতিদিনই এ নিয়ে খবরাখবর প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে। আসছে কিছু ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার খবরও। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বিভিন্ন দলের আশ্রয়–প্রশ্রয়ে অপকর্মের পেশাদাররাও কোথাও কোথাও মৌসুম বুঝে বিএনপির নাম ভাঙাচ্ছে। বিএনপির জন্য এটি বাড়তি এবং গুরুতর যন্ত্রণা। তা বিএনপির জনপ্রিয়তার পারদে নিম্নমুখী টোকা দিচ্ছে।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব অন্যায়-জুলুমের বিচার নিশ্চিত করার অবস্থান জানান দিয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপি ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে প্রাণহারা, গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর পাশে থাকবে- সেই আশ্বাসও দিয়েছেন। বিএনপির দ্রুত নির্বাচন দাবির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ব্যাখ্যায়ও শালীনতা ও রাজনীতির দৃষ্টান্ত। তার ভাষায়: একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সামনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা বিএনপি করবেই।

এছাড়া বেশ কয়েক জায়গায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনাও রয়েছে। নির্বাচনে দেরি হলে এই বিবাদ-সংঘাতের আরো বিস্তার ঘটার লক্ষণ বিদ্যমান। সেইসঙ্গে নির্বাচনে বিলম্ব ঘটানোর কিছু আয়োজন দেখছে বিএনপি। তা দলটির নেতারা দ্রুত প্রকাশও করছেন। দোষারোপ করছেন অন্তর্বর্তী সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের একটি মন্তব্য বিএনপির অভ্যন্তরকে বেশ নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে তিনি নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর একেকটার একেক ধরনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অ্যাজেন্ডা থাকে। তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে কথাবার্তা বলে। দাবিদাওয়া জানায়। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে। বিগত নির্বাচন কমিশনে ৩৯টি দল নিবন্ধিত ছিল। ৫ আগস্টের পর আরও কয়েকটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চয়ই সব দলকে মিন করেননি। বড় দল হিসেবে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত থাকা স্বাভাবিক। রাজনৈতিকভাবে এটি বিএনপির জন্য বিড়ম্বনার। এ বিড়ম্বনা কাটাতেও দ্রুত নির্বাচন বিএনপির জন্য অত্যন্ত প্রত্যাশিত।

নির্বাচন যত দেরি হবে, ততই বিএনপির মাঠ পিচ্ছিল হবে। এরইমধ্যে সেই লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির আশঙ্কা, যত দেরিতে নির্বাচন হবে, ততই নির্বাচনী মাঠ তাদের প্রতিকূলে যাবে। বিএনপি সরাসরি নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে না, কিন্তু নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে। রোডম্যাপ মানে হলো নির্বাচন কবে হবে, সেটা আগাম বলে দেওয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাজেন্ডায় নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

সরকারের মধ্যে ক্ষমতার কয়েকটি ভরকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে একটি ভরকেন্দ্র হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তারা এই মুহূর্তে নির্বাচন চাইছে না। তাদের চাওয়া সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার। নির্বাচনের পর বিজয়ী রাজনৈতিক দল গণহত্যার বিচার করবে না, এ শঙ্কার কথা চাঁচাছোলা ভাষায় বলছেন এনসিপি নেতারা। সারজিস আলম বলেছেন বেশি কড়া ভাষায়। শেখ হাসিনার গণহত্যার বিচারের আগে যেন কেউ নির্বাচনের নাম মুখেও না আনে-এ সতর্ক বার্তা দেন তিনি। সময়ক্ষেপণ না করে অত্যন্ত স্মার্টলি দ্রুত এর রেসপন্স করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আগামীতে যেই ক্ষমতায় যাবে, তাদেরকে অবশ্যই শেখ হাসিনার আমলের গুম-খুনের বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গে আরো যোগ করেছেন, গুম-খুনে অভিযুক্তদের বিচার না হলে, আবারো অন্যায়ের সুযোগ তৈরি হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব অন্যায়-জুলুমের বিচার নিশ্চিত করার অবস্থান জানান দিয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপি ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে প্রাণহারা, গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর পাশে থাকবে- সেই আশ্বাসও দিয়েছেন। বিএনপির দ্রুত নির্বাচন দাবির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ব্যাখ্যায়ও শালীনতা ও রাজনীতির দৃষ্টান্ত। তার ভাষায়: একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সামনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা বিএনপি করবেই।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন।

এইচআর/জেআইএম

Read Entire Article