ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের মামলায় বাদী হওয়ায় মন্টু চন্দ্র দাস (৩৫) নামে ভুক্তভোগীর বাবাকে হত্যা করে অভিযুক্তরা। এ ঘটনার চারদিন হলেও এখনও হত্যাকারীদের শনাক্ত হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের পর চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলে তিনজনকে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। একজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হত্যার ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ।
জানা যায়, ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার পর পুলিশ সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে। পরে হত্যা মামলার পর সৃজীবের বাবা শ্রীরাম রায়, সৃজীবের সহযোগী কালু ও রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তবে কাউকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগে নিহত মন্টুর এক মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ মার্চ বরগুনা সদর থানায় বাদী হয়ে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করেন মন্টু। পরে ওই দিনই মামলায় অভিযুক্ত একমাত্র আসামি সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। মামলা করার এক সপ্তাহ পরে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বরগুনা পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকার নিজ বসতবাড়ির পেছনের ঝোপঝাড় থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার নিহত মন্টু দাসের স্ত্রী শিখা রাণী বরগুনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। কিন্তু ঘটনার চারদিন হলেও পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি।
এদিকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তিসহ মন্টুর পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
নিহত মন্টুর বোন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাগো নিউজকে জানান, আসামি সৃজীব আগে থেকেই অপকর্মে জড়িত। ৪ মার্চ সন্ধ্যায় পর থেকেই মন্টুর মেয়ে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পরই প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের বাসায় খুঁজলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ৫ মার্চ সকালের দিকে মন্টুর বাড়ির পাশের ডিসি পার্ক সংলগ্ন জায়গা থেকে মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর মেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলে সৃজীব তাকে মুখে হাত দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে নির্যাতন চালায় বলে পরিবারকে জানায়। এর পরে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ সৃজীবকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
তিনি আরও জানান, মামলার ধার্য তারিখ ছিল বুধবার (১২ মার্চ)। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) মন্টু প্রতিদিনের মতো সকালেই দোকানে যায়। সন্ধ্যায় মন্টুর স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলে জানায় সৃজীবের পরিবার আপস মীমাংসা করতে চায়। আমি মন্টুকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। এদিকে সৃজীবের বাবা আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় মীমাংসার কথা বললেও হুমকি দিয়ে বলে আপস মীমাংসা না হলে তার ছেলে বের হলে আমাদের সবাইকে দেখে নেবে। ওইদিন রাত একটার সময় আবার মন্টুর স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বলে মন্টু এখনো বাড়ি ফেরেনি। এ কথা শুনে আমি ওদের বাড়িতে যাই। বাড়ির পেছনে ফোনের রিংটোন শুনতে পাই। পরে মন্টুর বড় মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পেছনে গিয়ে মন্টুর মরদের দেখতে পাই। মেয়ের অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্তদের ছাড়া আমার কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না।
নাম প্রকাশ না করে মন্টুর এক প্রতিবেশী জাগো নিউজকে বলেন, মন্টুর স্ত্রী ও বোনের চিৎকার শুনে আমরা এসে দেখি বাড়ির পেছনে মোবাইলে রিং বাজছে। চারপাশে টাকা পয়সা ও তার মায়ের ওষুধ ছড়ানো ছিটানো। মন্টুর মরদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় একদিকে পড়ে আছে। সারা শরীর কাদামাখা ও ভেজা। কিন্তু যেখানে মরদেহ ছিল সেখানে কোনো কাদাপানি ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে পুকুর একটু দূরে।
নিহত মন্টুর স্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, আমার মেয়ে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা করার পরে যেদিন মামলার ধার্য তারিখ ছিল তার আগের দিন রাতে আমার স্বামীকে হত্যা করে বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে যায়। আমার সন্দেহ এ কাজ ওরা করতে পারে। বর্তমানে আমি সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই আছি। সামনে আমি কী করবো বা আমার সংসার কীভাবে চলবে আমি জানি না।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত চলামান আছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মামলাটিতে আরও সময়ের প্রয়োজন।
মন্টু হত্যার ঘটনার দিন আটককৃত চারজনের বিষয়ে তিনি বলেন, সন্দেহজন চারজনের মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং একজনকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় মুচলেকা নিয়ে তার অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
নুরুল আহাদ অনিক/এমএন/এমএস