ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
গণমাধ্যমে লেখালেখি করলে কত কিছুই তো হয়! তার আদর্শ উদাহরণ ক্রিকেটার প্রান্তিক নওরাজ নাবিল। গেল ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন ও ইউটিউবে সর্বাধিক আলোচিত নাম।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের খুঁটিনাটি যাদের নখোদর্পণে, তারা এই ক্রিকেটারের নাম জানেন, চেনেন। নাবিল সম্প্রতি ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
একজন ক্রিকেটার ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপ বিজয়ী স্কোয়াডে ছিলেন (যদিও কোনো ম্যাচ খেলেননি) এবং গত প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানে যোগ দিয়ে ৬টি ম্যাচও খেলেছেন। সেই ক্রিকেটার হঠাৎ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তা আলোচিত হওয়ার মতোই খবর।
অনেকেই এর মধ্যে অনেক কিছুর গন্ধ খুঁজছেন। অস্বাভাবিকভাবে এ ঘোষণার পেছনের কারণ খুঁজছেন কেউ কেউ।
কোনো দল, ক্লাব, কোচ বা কর্মকর্তার ওপর ক্ষোভ-হতাশা থেকেই নাবিল এত অল্প বয়সে খেলা ছাড়লেন কিনা, তাও খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। কারো ওপর রাগ করে নাবিল নিজেকে ক্রিকেট থেকে সরিয়ে নিলেন কিনা, তা জানতেও রাজ্যের কৌতূহল।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের কাছে নাবিলই খোলাসা করেছেন আসল কারণ। নাবিল জানালেন, মূলত শারীরিক কারণেই হঠাৎ ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত।
সিঙ্গাপুরে গিয়ে নিজের পুরো শরীর চেকআপ করিয়েছেন। সেখানেই একটা সমস্যা ধরা পড়েছে। তা হলো ‘ডাস্ট অ্যালার্জি’। চিকিৎসকরা তাকে ধুলোবালিতে যেতে নিষেধ করেছেন। ধুলোবালিতে নিয়মিত যেতে থাকলে শরীরের জন্য হুমকি হতে পারে।
তাই বাধ্য হয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাবিল। কারণ, বাংলাদেশে যে মাঠেই খেলেন না কেন, সব মাঠেই ধুলোবালিতে পরিপূর্ণ।
কাজেই ফার্স্ট ক্লাস ও ক্লাব ক্রিকেট এবং দেশের ক্রিকেটের অন্যান্য আসরে অংশ নিলে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে শ্বাসনালীতে যাবে। তখন শরীরের আরও বড় সমস্যা হবে। তাই সবকিছু ভেবেচিন্তেই ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাবিল।
নাবিল গত বছর প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা মোহামেডানের হয়ে প্রথম ৬ ম্যাচ খেলেছেন। ওই ৬ ম্যাচে একটি ফিফটিও আছে তার। সেটা বিকেএসপি ৪ নম্বর মাঠে পারটেক্স স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে। ৭৭ বলে ৬০ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন নাবিল।
বাকি ৫ ম্যাচের একটিতে ব্যাট করেননি। অন্য চার ম্যাচে (১, ২, ১, ১৪) একদমই রান পাননি। তাই পরের দিকে আর একাদশে জায়গা মেলেনি। এছাড়া ২০২২ থেকে ৭টি ফার্স্ট ক্লাস এবং ২৮টি ‘লিস্ট এ’ ম্যাচে অংশ নিয়েছেন নাবিল।
নাবিলের মতো শারীরিক কারণে ক্রিকেট মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা না দিয়েও বিগত দিনে বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার কাউকে কিছু না বলেই সরে দাঁড়িয়েছেন। তারা হয়তো গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হননি। তাই তাদের কথা হয়তো অনেকের জানাও নেই। তেমনি এক ক্রিকেটার হলেন ওয়াসেল উদ্দীন।
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে খোঁজ খবর যারা রাখেন, তাদের কাছে কুমিল্লার ওয়াসেল পরিচিত মুখ। নাবিলের মতো ওয়াসেলও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ভালো খেলেই ঢাকা মোহামেডানে এসেছিলেন। মোহামেডানের হয়ে এক মৌসুমে ৪-৫টি ফিফটিও আছে ওয়াসেলের।
তিন যুগের বেশি সময় মোহামেডানের সাথে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে থাকা তারিকুল ইসলাম টিটুও জানালেন, কুমিল্লার ওয়াসেল মোহামেডানের হয়ে এক মৌসুম বেশ ভালো খেলে অনেক রান করেছিলেন। কিন্তু তারপর প্রায় নীরবেই খেলা ছেড়েছেন। এখন ওয়াসেল কোথায় আছেন? সে খবরও হয়তো তেমন কেউ জানেন না।
কাজেই এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে এর আগে কেউ অল্প বয়সে ক্রিকেট ছেড়ে দেননি। এটা সত্য যে, শারীরিক কারণে নাবিলের মতো হয়তো ধুলোবালির কারণে মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়নি। তবে ইনজুরি, ফর্মহীনতা এবং ভাগ্য অন্বেষণে গত দুই যুগে প্রায় অর্ধডজন ক্রিকেটার কাউকে না বলে নীরবে-নিভৃতে ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানিয়েছেন।
সেই তালিকায় ওয়াসেল উদ্দীন, নাহিদ (রাজিন সালেহর বড় ভাই, বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী), পারভেজ আহমেদ (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), ইমরান রহিম লালু (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী) আছে আরও কত নাম। যাদের কথা হয়তো এখন স্মরণেও নেই ক্রিকেট অনুরাগীদের। অথচ এক সময় তারাও ছিলেন পরিচিত মুখ, প্রতিষ্ঠিত নাম।
তাদের কেউ জাতীয় দলে না খেললেও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ভালো পারফরমার হিসেবেই ছিলেন সমাদৃত। খেলেছেন মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো বড় দলে। কিন্তু হঠাৎ সময় খেলা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন ভাগ্য অন্বেষণে। তাদের কথা হয়তো ভুলেই গেছেন দেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা।
এআরবি/এমএইচ/জেআইএম