ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
১৬৪৮ সালে বরিশালের উপকূল অঞ্চলে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেলে মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার পুত্র শাহজাদা সুজাকে এই অঞ্চলে সুবেদার করে পাঠান। জলদস্যু তাড়াতে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মধ্য দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি নলছিটি পৌর এলাকার মল্লিকপুরে অবস্থিত। নদীর অপরপ্রান্তে তৈরি করেন কেল্লা।
১৬৫৪ সালে নির্মিত সুজাবাদের কেল্লার নামকরণ করা হয়েছে শাহজাদা সুজার নামে। বর্তমানে ওই গ্রামটির নামও সুজাবাদ। ৪০০ বছর আগে নির্মিত জামে মসজিদটিতে আজও নামাজ আদায় করছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের নলছিটি-বরিশাল সড়ক সংলগ্ন এই মসজিদটি এখন মল্লিকপুর জামে মসজিদ নামে পরিচিত। এটি প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির উচ্চতা ৩০ফুট এবং এর গায়ে নির্মাণকাল ১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ লেখা রয়েছে।
মসজিদটির দেয়ালগুলো ৩২ইঞ্চি পুরু এবং নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে চুন-সুরকি। আগে মসজিদে একসাথে ৩০-৩৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। তবে এখন স্থানীয়দের সহায়তায় মসজিদের তিন পাশে আলাদা বারান্দা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে প্রায় শতাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
- আরও পড়ুন:
চাঁদপুরের ৪০০ বছরের বাখরপুর জামে মসজিদ
নেই সেই দস্যুতা, তবুও কাটে না দুর্দশা
জীবন সাজে-ফের চোখের জলে ভাসে
স্থানীয়রা জানান, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথে জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে যায়। পর্তুগীজ এবং মগ জলদস্যুদের বিতাড়িত করতে ঝালকাঠির মগড় এলাকায় আসেন শাহজাদা সুজা। তিনি মসজিদে অবস্থান নিয়ে সুগন্ধা নদীর উত্তর পাড়ে মাটির নিচে একটি দুর্গ গড়ে তোলেন। এরপর সৈন্যবাহিনী ও স্থানীয়দের সহায়তায় জলদস্যুদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন।
স্থানীয়দের অনুরোধে নদীর অপর পাড়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, যা মুঘল আমলের এক অসাধারণ নির্মাণশৈলী হিসেবে আজও টিকে আছে। মসজিদটি মুঘল শাহ সুজার মসজিদ নামেও পরিচিত। তবে দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এর নান্দনিকতার জৌলুস কিছুটা কমে গেছে। এলাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদে একসাথে সবার নামাজ আদায়ের জন্য জায়গার সংকুলান হয় না।
মুসুল্লি কামরুজ্জামান সুমন বলেন, ‘এই প্রাচীন নিদর্শনটির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কয়েক শতাব্দী পুরনো মুঘল নির্মাণশৈলীর একটি অসাধারণ উদাহরণ। তবে যদি সংস্কার না করা হয়, তাহলে হয়ত এটি আর বেশি দিন টিকবে না।’
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে মগড় ইউনিয়নে অবস্থিত সুজাবাদ কেল্লার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলেও, নির্মিত এই মসজিদটি এখনও আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে টিকে আছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে নামাজ পড়তেন, সেই সময় এলাকার মসজিদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। কিন্তু এই মসজিদটি সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এবং এটি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এই মসজিদটি মুঘল আমলের ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশিল্পের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যা সময়ের সঙ্গে নিজের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব হারায়নি।’
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাচীন নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। আমরা তাদের বিষয়টি জানিয়েছি এবং উপজেলা প্রশাসন থেকেও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করা হবে।’
জেএস/জেআইএম