‘আমাদের জায়গা হয়েছে স্টোর রুমের ভাঙা চেয়ার-টেবিলে’

1 day ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

পাইলিং শেষে বন্ধ রয়েছে শরীয়তপুরের আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ। ভবন না থাকায় একটি জরাজীর্ণ টিনসেডে চলছে শিক্ষা-কার্যক্রম। পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষের অভাবে বেছে নিতে হয়েছে স্টোর রুমটিও। দ্রুত ভবন নির্মাণ শেষ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকায় আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

চালুর পর থেকে বিদ্যালয়টি একটি আধপাকা ভবন ও ওপরে টিনসেডের পাঁচটি কক্ষের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৫ জন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে দীর্ঘদিনের পুরাতন ভবন হওয়ায় আধপাকা ভবনের প্রতিটি পিলার ধসে বের হয়ে আসে রড। পচে গেছে কাঠগুলোও, মরিচা ধরেছে টিনের চালায়। পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি দেওয়াল জুড়ে অসংখ্য ফাটল। পর্যাপ্ত রুমের অভাবে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। গ্রীষ্ম-বর্ষায় ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এদিকে দশম শ্রেণির নতুন শিক্ষার্থীদের জায়গা হয়েছে স্টোররুমের পুরান চেয়ার টেবিলের মাঝে। অথচ ২০২১ সালে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে বিদ্যালয়ের জন্য একটি নতুন ভবনের অনুমোদন দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র নিচের পাইলিং কাজ শেষ করে ফেলে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। নতুন ভবন না থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন।

‘আমাদের জায়গা হয়েছে স্টোর রুমের ভাঙা চেয়ার-টেবিলে’

হুমাইরা আক্তার নামে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, আমি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এই জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা করে আসছি। আমাদের পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষে নেই। একটি অডিটোরিয়ামে ভাগাভাগি করে বসে ক্লাস করি।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ২০২১ আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের কথা ছিল। এখন ২০২৫ সাল। কিন্তু সেই ভবন আর হয়নি। আমাদের যেখানে নিয়মিত ক্লাস হওয়ার কথা, সেই রুম এখন সিনিয়র আপুরা ক্লাস করছে। তাই আমাদের জায়গা হয়েছে একটি স্টোর রুমের পুরাতন ভাঙা চেয়ার-টেবিলের সঙ্গে। এখানে পড়ার কোনো পরিবেশ নেই। আমরা চাই দ্রুত নতুন ভবনের কাজটি চালু করা হোক।

বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসমুত আরা অ্যানি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন ৫টি শ্রেণিকক্ষ, কিন্তু এখানে আছে মাত্র ৪টি কক্ষ। গাদাগাদি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। গরমে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। আমি চাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে হলেও নতুন ভবন খুবই প্রয়োজন।

আরেক শিক্ষক নাসরিন আক্তার বলেন, আমাদের আশির দশকের পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে পড়াশোনা করাতে হচ্ছে। এজন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কেননা অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পড়াশোনার জন্য ভর্তি করতে চান না। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শুধু পাইলিং হওয়ার পর আর হয়নি। আমরা চাই ভবনটির কাজ আবার চালু করা হোক।

‘আমাদের জায়গা হয়েছে স্টোর রুমের ভাঙা চেয়ার-টেবিলে’

আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ হালদার বলেন, ৩০ বছর আগে নির্মাণ হওয়া আধপাকা ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে, বৃষ্টিতে পানি পড়ে। কক্ষ সংকটে স্টোররুমে ক্লাস নিতে হয়। পুরাতন ভবনে এখন আর শিক্ষার পরিবেশ নেই। নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েও বন্ধ হয়ে আছে। আমরা দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ চালুর দাবি জানাই।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র শর্মা বলেন, আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি একটি জরাজীর্ণ টিনসেড ভবনে পরিচালনা হয়ে আসছে। ২০২১ সালে বিদ্যালয়ের জন্য একটি নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে পাইলিং শেষ হয়েছে। দ্রুত ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রয়োজন মনে করছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, কাজ বন্ধের পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা আবার কাজ শুরু করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

বিধান মজুমদার অনি/জেডএইচ/এমএস

Read Entire Article