ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোমতাজ আলী শেখের মার্কেট দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকদল নেতা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মার্কেটটি দখলে নেন উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান। প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের মার্কেটের ২২টি দোকানের সবগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তিনি।
শ্রমিকদল নেতার দখল করা ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে জোরপূর্বক ভাড়া উত্তোলন করছেন তার সহযোগী জাসদ নেতা কামাল বিশ্বাস। তিনি উপজেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক।
মার্কেটের ২২টি দোকানের একটিতে করা হয়েছে উপজেলা শ্রমিকদলের কার্যালয়। বেশকিছু চেয়ার-টেবিল বসিয়ে দেওয়ালে টানানো বিএনপি নেতাদের ছবি।
ভুক্তভোগী মোমতাজ আলী শেখ বলেন, “গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদল নেতা আব্দুল হান্নান আমার দুটি দোকানঘর দখল করে নেন। পরে মার্কেটের ২২টি দোকানের সবগুলোই তারা দখল করে নেন।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “কুমারখালী থানায় বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। পুলিশের ভাষ্য, বারবার নিষেধ করার পরও তারা কোনো কথাই শুনছেন না।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে হানিফ মিয়া নামের একজন তার ৪৩ দশমিক ৫০ শতক জমির মধ্যে ৩৩ শতক জমি এওয়াজ (বিনিময়) দলিলে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রামের মৃত আফসার আলী শেখের ছেলে মোমতাজ আলী শেখের কাছে হস্তান্তর করেন। মোমতাজ আলী পরবর্তীতে সেখানে ২২টি সেমিপাকা দোকানঘর নির্মাণ করেন। দোকানগুলো থেকে তিনি প্রতিমাসে নিয়মিত ভাড়া উত্তোলন করতেন।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী উপজেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক কামাল বিশ্বাস জোরপূর্বক তার দুটি দোকান দখল করে নেন।
সরেজমিন দেখা যায়, দখল করা দুটি দোকানের একটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছবি টানিয়ে রাখা হয়েছে। অপরটি ভাড়া দেওয়া। বাকি ২০টি দোকানে মোমতাজের ভাড়াটিয়া থাকলেও জোরপূর্বক ভাড়া উত্তোলন করছেন হান্নান ও কামাল বিশ্বাস।
মার্কেটের ভাড়াটিয়া রুহুল আজম বলেন, ‘‘২০০৭ সালে দোকানটি মোমতাজের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তাকেই নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করে আসছিলাম। কয়েকদিন আগে কামাল বিশ্বাস মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দাবি করেন। প্রথমে ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পরে আমরা কামাল বিশ্বাসকে ভাড়া দিয়েছি।”
তবে শ্রমিকদল নেতা হান্নান বিশ্বাসের দাবি, জমিটি ২০০৭ সালে মূল মালিকের কাছ থেকে কিনেছেন কামাল বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের সময় প্রশাসন দিয়ে মোমতাজ আলী জমিটি জমি দখল করে নেন। ৫ আগস্টের পর ফেরত নেওয়া হয়েছে।
তবে হান্নান এবং কামাল বিশ্বাস এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাদের কাগজপত্র ও দলিল আদালতে জমা রয়েছে বলে জানান।
মোমতাজ শেখ বলেন, ‘‘আমার জমি কেনার ২৬ বছর পর কামাল বিশ্বাস একটি জাল দলিল তৈরি করে আদালতে মামলা করেন। ওই জাল দলিল আদালত আটকে দিয়েছেন। আমার পক্ষে আদালত আদেশ দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তারা আমার জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন। পরে আমি কামাল বিশ্বাসের নামে দেওয়ানী মামলা করি। ওই মামলায় আদালত ২২টি দোকানঘরের রক্ষণাবেক্ষণ মেরামত ও ভাড়া বিলের মাধ্যমে বা স্বয়ং দখল ভোগ করার অধিকার আমার পক্ষে আদেশ দেন।”
বিষয়টির সামগ্রিক তদারকির জন্য কুমারখালী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কুমারখালী থানা পুলিশ।
জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মারজান বলেন, “মোমতাজ শেখের কাগজপত্র সঠিক আছে। আদালতের আদেশও তার পক্ষে। আমি একাধিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানের ভাড়া তুলতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনছেন না।”
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “উক্ত জায়গার নিয়ে উভয়পক্ষে আদালতে মামলা করেছেন। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যার পক্ষে রায় দেবে থানা পুলিশ তাকে দোকানঘর বুঝিয়ে দেবে।”
উপজেলা জাসদের সভাপতি জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “কামাল বিশ্বাস উপজেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে দেখছি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করছেন। বর্তমানে তিনি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় নন।”
এ বিষয়ে উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি কিয়াম বিশ্বাস বলেন, “শুনেছি জায়গা নিয়ে মামলা রয়েছে। দখলের বিষয়টি জানি না। আমি ওই অফিসে যাই না।”
জাসদ নেতা কামাল বিশ্বাস বলেন, “এটি আমার কেনা জমি। আমার নিজেরই মার্কেট। এখানে দখল করার কিছু নেই। আমার দোকানে আমি ভাড়া নিচ্ছি। জমির কাগজপত্র আদালতে রয়েছে।”
আদালতের রায় আপনার পক্ষে গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘‘পরে কথা বলছি’’ বলে ফোন কেটে দেন।
দখলকারী শ্রমিক দল নেতা হান্নান বিশ্বাস বলেন, “জমিটি ২০০৭ সালে মূল মালিকের কাছ থেকে কিনেছেন কামাল বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের সময় প্রশাসন দিয়ে মোমতাজ আলী জমিটি জমি দখল করে নেন। ৫ আগস্টের পর ফেরত নেওয়া হয়েছে। তাদের কাগজপত্র ও দলিল আদালতে জমা রয়েছে।”
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, “বিএনপি দখলদারীতে বিশ্বাস করে না। দল বা দলের অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতা যদি দখলদার হয়ে থাকে, তাহলে উপযুক্ত প্রমাণ দিলে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মিকাইল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার গোচরীভূত হয়েছে। দোকান মালিক যদি অভিযোগ করেন, তাহলে থানা পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, “কেউ কারো সম্পত্তি জোর করে দখল করার কোনো সুযোগ নেই। এ অভিযোগটি আমি পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে দেখব। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”