ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি দখল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে- এএলআরডি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নিজেরা করি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি ঐক্য পরিষদ, পিইউপি, রোপ, স্বপ্ন, পেইস্ট, ছিন্নমূল, পল্লী উন্নয়ন অগ্রগতি, নিত্যবিকাশ কেন্দ্র ও তরনী।
এ সময় অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার রফিক আহমেদ সিরাজী একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
তিনি বলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে আদিবাসীদের ভোগ-দখলীয় জমিতে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকেরা মাটি ভরাট করতে শুরু করলে কয়েকজন যুবক তাতে বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেকোলাস মুর্মুর নামের এক যুবককে মারধর করেন। খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরেন নামের আরেক যুবক প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান তাকেও লাঠি দিয়ে মারধর করার হুমকি দেন। এ সময় সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার জের ধরে ওই দিনই রাত ১১টার দিকে ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে মাটির ঘরের আসবাবপত্র, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে যায়। এই ঘটনাকে সামনে রেখে ঢাকা, বগুড়া ও গাইবান্ধার ১৭টি ভূমি অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠন সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধান করেছে। প্রতিনিধি দল ভুক্তভোগী, স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন।
- আরও পড়ুন
- সাঁওতালের জমি দখল করায় বিএনপি নেতা বহিষ্কার
সাঁওতালদের জমি দখলে রাষ্ট্র নিজেই নেমে গেছে
উত্তরায় কল্যাণ সমিতি অফিস দখলমুক্ত করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা
সংবাদ সম্মেলনে রফিক আহমেদ সিরাজী বলেন, প্রতিনিধি দল ভুক্তভোগী সরেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি ভারাক্রান্ত মনে জানান এই এলাকায় তাদের তিন একর ৭২ শতক জমি রয়েছে। খতিয়ানে এ জমির মালিক লক্ষণ হেমব্রম। যিনি এ জমি পেয়েছিলেন রাজা শৈলাস চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে। জমিদারি প্রথা বিলোপ হওয়ার পর লক্ষণ হেমব্রম তার দাদি মাইকা হেমব্রমের নামে এ জমি রেকর্ড করে দিয়েছেন, সেই থেকেই তারা এ জমি ভোগ-দখল করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কেরু মন্ডল নামে এক বাঙালি দাবি করেন তিনি চেক দাখিলা মূলে এ জমির মালিক হয়েছেন। এ নিয়ে সরেনদের পূর্ব পুরুষদের সঙ্গে একটি মামলা হয়, আদালত ১৯৮০ সালে সাঁওতালদের পক্ষে রায়ও দিয়েছেন। তারপরও তারা তাদের জমি ভোগ-দখল করতে পারেননি। কেরু মন্ডলের নামে খতিয়ান হলেও আদালতের রায়ে তার মালিক সরেনরা। কিন্তু বিআরএস খতিয়ান হওয়ার সময় কেরু মন্ডল আদালতের রায় গোপন করে তার নামে করে নেন। পরে যখন কেরু মন্ডল বুঝতে পারেন কোনো অবস্থায়ই তিনি এ জমি পাবেন না তখন সরেনদের নামে রেজিস্ট্রি করে তা ফেরত দেন।
তিনি বলেন, ওই জমি কেরু মন্ডলের ছেলে হবিবুর মন্ডল রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন। সেই অবৈধ কাগজের বলে চেয়ারম্যান এ জমির মালিক দাবি করে আসছেন। যার আদতে কোনো ভিত্তি নেই। চেয়ারম্যান স্থানীয় বিএনপির প্রভাশালী নেতা ছিলেন। তাকে ৫ জানুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এখন সুইজারল্যান্ডে। ছয় মাস হয়ে গেছে কিন্তু তারা কিছুই করছেন না। দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তাদের কোনো খবর নেই। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিরণ মিত্র চাকমা।
আরএএস/এমআরএম