ড্যাপ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের আচরণ বৈষম্যমূলক

7 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স অভিযোগ করেছে, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের নামে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছে। যা শহরের বাসযোগ্যতা, জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থকে আরও হুমকিতে ফেলবে। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ, আচরণ ও দায়িত্বশীলতা জনস্বার্থের পরিবর্তে বৈষম্যমূলকভাবে গোষ্ঠীস্বার্থের অনুকূলে পরিচালিত হচ্ছে।

সংগঠনটি জানায়, অতীতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্বার্থগোষ্ঠী শহরের পরিকল্পনা ও ইমারত বিধিমালাকে অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে তলানির দিকে গিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘গোষ্ঠীস্বার্থে বারবার ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালার পরিবর্তনঃ জনস্বার্থ ও বাসযোগ্যতার বিপন্নতা এবং নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান, সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, সেন্টার ফর অ্যাটমসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান আহমেদ কারুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শাহিনুর, আবু সাদেক, মিজানুর রহমান, সেলিনা প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুথানের পর দেশের সংবিধানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কার হলেও সমগ্র দেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের নগরায়ন, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, ইমারত, নির্মাণ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার যৌক্তিক কোনো সংস্কার হয়নি। বিপরীতে ড্যাপ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই অপপ্রচার চালিয়েছে। ড্যাপ অচিরেই সংশোধন করা হবে, এই বার্তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ভবন নির্মাণে অগ্রহী ভবন মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বারংবার স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারছে না। গত দুটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের পরপরই রিভিউ কমিটি গড়ে ড্যাপ বাস্তবায়নের মূল শক্তিটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সরকার উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী মহলের কাছে সামগ্রিক জনস্বার্থ এবং শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়েছে। অনুরূপভাবে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ এর সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে। যাতে আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নাগরিক সুবিধার মানদণ্ড বা স্ট্যান্ডার্ড অনেক কমিয় ফেলা হয়েছে। ফলে পার্ক, খেলার মাঠ, বিদ্যালয় এসব নাগরিক সুবিধাদির পরিমাণ কমেছে।

এসময় বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে ছিল- মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ও পুনর্মূল্যায়নে শহরের বাসযাোগ্যতা, ধারণক্ষমতা, নাগরিক সুবিধাদির সুষম বণ্টন, এলাকাভিত্তিক সাম্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জলাশয়-জলাধার, কৃষিভূমি-জলাধার রক্ষা- এসবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ভবনের মধ্যবর্তী কৌণিক দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে সেটব্যাকের যথাযথ মান নিশ্চিত করে ঘরের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করতে হবে। আবাসিক এলাকার ভবনসমূহের ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এলাকাভিত্তিক ভিন্নতাকে মাথায় রেখে বিভিন্ন এলাকার জন্য পৃথক জনঘনত্ব, এফএআর মান ও কাঠাপ্রতি ভবনের উচ্চতার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

তুলে ধরা প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে আরও ছিল, প্রস্তাবিত রাস্তার ওপর ফার দেওয়ার মতো আত্মঘাতী চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে, পরিবারের সংখ্যা নির্ণয় করতে হবে, এলাকাভিত্তিক ফারকে অতিক্রম করে প্লট ফারকে বিবেচনায় নিয়ে ভবনের আকার-আয়তন-উচ্চতার অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অগ্নি দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরু রাস্তার পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ অনুমোদন বন্ধ করতে হবে এবং ছয় তলার ওপরে ভবনকে বহুতল ভবন বিবেচনায় নিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংশোধন এনে ভবনে অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।

ইএআর/এএমএ/এমএস

Read Entire Article